এই ঘিঞ্জি এলাকায় একটা ছোট কাঠের বাড়িতে পা দিয়ে দেখি, সামনের বারান্দায় একটা ময়লা তেলচিটে ইজিচেয়ারে একজন একা মানুষ আধশোয়া হয়ে আছে। হাড়-বের করা রুক্ষ চেহারা, গালে গর্ত, চোখে চশমা। অনেক লড়াইয়ের চিহ্ন তার শরীরে ফুটে আছে। কঠিন বাস্তব তার রক্তরস নিঙ্গড়ে একটা ছিবড়ে মানুষকে ফেলে রেখে গেছে। সন্ধ্যার আলো-অন্ধকারে দেখি লোকটা বড় অন্যমনস্ক, হাতে সিগারেট জ্বলে যাচ্ছে, লম্বা হয়ে ঝুলে আছে সিগারেটের পতনম্মুখ ছাই। দেখি লোকটা পশ্চিমদিকের সেই সুন্দর শহরটার দিকে চেয়ে আছে যেনো। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো আমার মনে হলো, লোকটা স্বপ্ন দেখছে। ঐ যে পশ্চিমের সুন্দর শহর, ঐখানে কোনদিন তার যাওয়া হয় নি, সুখী মানুষদের একজন সে হয়নি কখনো, তার ঘরে ওড়েনি অগ্যান্ডির পর্দা। অভিশপ্ত কিছু মানুষের একজন সে হয়ে রইল চিরকাল, লড়াই করেছে অনেক- কিন্তু স্বপ্নের শহর রয়ে গেল দূরে। যাওয়া হলো না! ক্রমে বয়স বেড়ে গেল, পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যায় বিশাল হাহাকারের গহ্বরে ভরা একটা জীবন তার, মুঠো খুললে দেখা যায় প্রাপ্তি- শূন্য। তাই এই ভরসন্ধ্যায় একা নির্জন মানুষটি স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্ন দেখছে, সে পশ্চিমের ঐ শহরটিতে চলে যাবে।
-ফেরা